(মাদরাসাতুল মাদীনাহর সম্মানিত অভিভাবক ও তালেবে ইলমের পালনীয়)
নিয়মাবলী
দাখেলার আবেদন সংক্রান্ত
1. তালিবে ইলমের দাখেলা সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব (মাদরাসার সাথে যোগাযোগ, তথ্য প্রদান, মৌখিক পরীক্ষার সময় ও চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তালেবে ইলমের সাথে উপস্থিত থাকা) অভিভাবক হিসেবে বাবা নিজে, বাবা মারহুম হলে মা পালন করবেন।
2. বাবার জীবদ্দশায় শুধু তিনিই অভিভাবক হবেন। তিনি মারহুম হলে মা অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবেন, সে ক্ষেত্রে মায়ের উপস্থিতি জরুরী নয়, বিশ্বস্ত কেউ মায়ের পক্ষ হতে দস্তখতসহ লিখিত আবেদন সাথে নিয়ে এলে যথেষ্ট হবে। মা-বাবা ব্যতীত অন্য কেউ অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
3. অভিভাবকের কর্তব্য মাদরাসার নেসাব ও নেযাম (পাঠ্যব্যবস্থা ও প্রশাসনব্যবস্থা) সম্পর্কে যথাসাধ্য ধারণা নেয়া এবং নেসাব ও নেযামের প্রতি সম্পূর্ণরূপে আশ্বস্ত হয়ে দাখেলার আবেদন করা।
4. অভিভাবক যদি মাদরাসার এই চিন্তার সাথে পূর্ণ একাত্ম থাকেন যে, মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ নেসাব (কিতাব বিভাগ ৪+৩ বছর, ওয়াকফ ৩+২ বছর) সমাপ্ত করা তালিবে ইলমের জন্য কল্যাণকর ও জরুরি তাহলেই শুধু দাখেলার আবেদন করতে পারবেন।
5. লেখাপড়ার পাশাপাশির পরিচালিত মাদরাসার যাবতীয় কার্যক্রম (তালীম, তারবিয়ত, দাওয়াত ও খেদমতে খালক) এর প্রতি অভিভাবকের পরিপূর্ণ একাত্মতা জরুরি।
6. মাদরাসাতুল মাদীনায় শিক্ষা গ্রহণ করা অবস্থায় অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়া এবং অন্য কারো কাছ থেকে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকতে হবে।
7. অসুস্থতা কিংবা অন্য কোন ওযরে মাদরাসার খাবার গ্রহণ করতে যাদের কষ্ট হয় তাদের উচিত দাখেলার আবেদন করা হতে বিরত থাকা।
বিরতি সংক্রান্ত
1. মাদরাসার বিরতিবিধি কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
2. বিরতির দিনসমূহ:
মক্তব বিভাগ: প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর বৃহস্পতিবার যোহরের পর হতে শনিবার যোহর পর্যন্ত পাক্ষিক বিরতি । ৫ই যিলহজ হতে ১৫ই যিলহজ পর্যন্ত (১০ দিন)। ৫ই রবিউল আউয়াল হতে ১৫ই রবিউল আউয়াল পর্যন্ত (১০দিন)। ১লা জুমাদাল উখরা হতে ১০ই জুমাদাল উখরা পর্যন্ত (৯দিন)। এবং ২৬শে শাবান হতে ৫ই শাউয়াল পর্যন্ত মাদরাসার লেখা-পড়ার নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
১ম বর্ষ থেকে ৩য় বর্ষ: ক. ৫ই যিলহজ হতে ১৫ই যিলহজ পর্যন্ত (১০ দিন)। খ. ৫ই রবিউল আউয়াল হতে ১৫ই রবিউল আউয়াল পর্যন্ত (১০দিন)। গ. ১লা জুমাদাল উখরা হতে ১০ই জুমাদাল উখরা পর্যন্ত (৯দিন)। এবং ২৬শে শাবান হতে ৫ই শাউয়াল পর্যন্ত মাদরাসার লেখা-পড়ার নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
৪র্থ বর্ষ হতে ৭ম বর্ষ: ক. ১২ই যিলহজ হতে ২২ যিলহজ পর্যন্ত (১০দিন)। খ. ১৬ই রবিউল আউয়াল হতে ২৬ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত (১০দিন)। গ. ১লা শাবান হতে ২৫ই শাবান পর্যন্ত মাদরাসার লেখা-পড়ার নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
3. বিরতির সময় প্রদত্ত তালিমী ও তারবিয়াতি কর্মসূচী তালিবুল ইলমকে দিয়ে পালন করানোর দায়িত্ব অভিভাবককে পালন করতে হবে।
4. পারিবারিক উৎসব বা অনুষ্ঠানে তালিবে ইলমের অংশগ্রহণ কাম্য হলে সেটার তারিখ তালিবুল ইলমের সময়সূচী লক্ষ্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে। (অন্যথায় বিষয়টি তালিবুল ইলমের অগোচরে রাখতে হবে।) এই ক্ষেত্রে কোন প্রকার আবেদন করতে পারবেন না এবং বিষয়টি কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
দেখা-সাক্ষাত ও ফোনে যোগাযোগ
1. তালিবুল ইলমের সাথে দেখা করতে হলে শুক্রবার ফযরের পর হতে মাগরিব পর্যন্ত এবং শনিবার (দরস-মুযাকারার সময় ব্যতিত অন্য সময়) করতে হবে। অন্যকোন দিন দেখা করার প্রয়োজন হলে আগে দফতরে যোগাযোগ করতে হবে।
2. আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এবং রাত ৯:৩০ মিনিট হইতে ১০:৩০ মিনিট পর্যন্ত শুধু জাওয়ালে কথা বলা যাবে।
3. স্বয়ং অভিভাবক ছাড়া অন্য কেহ সরাসরি তালিবুল ইলমের সহিত জাওয়ালে কথা বলতে পারবে না। যা বলার প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট উস্তাদের সাথে বলতে হবে।
4. অভিভাবক নিজে অথবা অভিভাবকের পক্ষ হতে প্রেরিত ব্যক্তি তালিবুল ইলমের সাথে দেখা করতে চাইলে অতি অবশ্যই পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে। অন্যথায় শুধু দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা যাবে। পরিচয়পত্র ছাড়া তালিবুল ইলমের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি হবে না।
5. দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে তালিবুল ইলমের সাথে সাক্ষাত করতে হবে। সরাসরি তালিবুল ইলমের কামরায় গমন করা ও দেখা করা নিয়মবিরুদ্ধ হবে।
দস্তরখান ও পোশাক
1. মাদরাসার দস্তরখানে পরিবেশিত খাবারই গ্রহণ করতে হবে। বাহিরের কিংবা বাড়িতে তৈরি করা খাবার কোনভাবেই মাদরাসায় আনা যাবে না। এটা তালেবে ইলমের জন্য আত্মঘাতী। তবে শুকনো খাবার যা সুন্দুকে রাখা যায়, রাখতে পারবে।
2. মক্তবের তালেবে ইলমদের ক্ষেত্রে কোন ধরণের খাবার রাখার অনুমতি নেই, ইনশাআল্লাহ মাদরাসার পক্ষ হতে তাদের হালকা নাস্তার ইনতেজাম করা হবে।
3. মাদরাসায় ব্যবহার করার জন্য নির্ধারিত অভিন্ন পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবী, (হাতা কাটা নয়, কলার না থাকা কাম্য)। লম্বা বা গোল সুতি টুপি।
তালিবে ইলম প্রয়োজনীয় যে সকল সামান মাদরাসায় রাখতে পারবে
1. খাতা, কলম, দরসের কিতাব, উস্তাযের নির্দেশনায় আদীব হুজুরের কিতাব।
2. পাঁচ জোড়া কাপড়, পাঁচটি গেঞ্জি, দুইটি লুঙ্গি,একটি গামছা, তিনটি টুপি, একটি কাপড়ের ব্যাগ। শীতকালে একটি সোয়েটার, একটি চাদর, একটি মাফলার বা রুমাল এবং মোজা।
3. একটি কলমদানি, রুলার, মেসওয়াক, ব্রাশ, পেস্ট, নখ কাটার যন্ত্র, আয়না, ছাতা।
4. গোসলের সাবান,গুঁড়ো সাবান, নীল, কাপড় কাচার ব্রাশ, টিস্যু, তেল, একটি গ্লাস, ক্রিম, বারোটি ক্লিপ।
(এ ছাড়া অন্য কোন সামান সুন্দুকে রাখার অনুমতি থাকবে না।)
5. মাদরাসার পক্ষ থেকে ইনশাআল্লাহ বিছানা, মশারী, সুন্দুক, দস্তরখান ও গোসলের ইজতিমাঈ সামানের ব্যবস্থা করা হবে।
6. কাঁথা, বালিশ, বিছানার চাদর তালেবে ইলমের সাথে আনতে হবে ।
আর্থিক মুয়ামালা
1. দপ্তরের সাথে যাবতীয় লেনদেন অভিভাবককে নিজে কিংবা তার প্রেরিত ব্যক্তির মাধ্যমে কিংবা মাদরাসার হিসাব নাম্বার (মাদরাসাতুল মাদীনাহ, চলতি হিসাব নং ১০৩৬ ইসলামী ব্যাংক, হেমায়েতপুর শাখা) কিংবা এই নাম্বার (০১৭২১৮৪৩৯৫০) এর মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। অর্থ প্রেরণের পর তালিবে ইলমের নাম,পরিচিতি নং,পরিমাণ এবং যে শাখা/নাম্বার হতে প্রেরণ করা হয়েছে তা বার্তা লিখে দপ্তরের ০১৮৫৫৯৪৮১০৬ নাম্বারে প্রেরণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় গ্রহণযোগ্য হবে না। কোন অবস্থাতেই তালিবুল ইলমের মাধ্যমে মাদরাসার সাথে আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। (এটা ইলমের জন্য ক্ষতিকর।)
2. অভিভাবককে দপ্তরের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ অবশ্যই আবেদনপত্রে প্রদত্ত নাম্বার দ্বারা করতে হবে।
3. শাওয়াল হতে শাবান পর্যন্ত তালিবুল ইলমের মাদরাসায় অবস্থান করার বিপরীতে তার অভিভাবক প্রতি হিজরী মাসের দশ তারিখের মধ্যে ৪,০০০/= করে ওয়াযিফা প্রদান করবেন। (বিরতি ও অনুপস্থিতির দিনগুলিতেও অর্থাৎ সর্বাবস্থায় শাওয়াল হতে শাবান পর্যন্ত এগার মাসে সর্বমোট ৪৪,০০০ [চুয়াল্লিশ হাজার] ওয়াযীফা প্রদান করবেন।)
4. দাখেলার সময় অতিরিক্ত ১১,০০০/= (অর্থাৎ, আবেদনপত্র ৫০০+ দাখেলা-সম্মানি ৫,০০০+ বিবিধ [বিছানা, মশারী, সুন্দক ও অন্যান্য ইজতিমায়ী সামান] ৪,০০০+ শীতের পোশাক বাবদ ৫০০+ দুই পর্বের পরীক্ষা-সম্মানি ১,০০০) শাওয়াল মাসের ওয়াযিফা ৪,০০০ সহ সর্বমোট ১৫,০০০ অর্থ প্রদান করবেন।
গুরুতর শৃঙ্খলা লঙ্ঘন
1. দাখেলার সময় অসত্য তথ্য দেয়া।
2. কারো নিকট জাওয়াল (মোবাইল) কিংবা এ জাতীয় কোন কিছু থাকা।
3. মাদরাসার আদর্শ ও চিন্তা-চেতনা বিরোধী কোন চিন্তা ও চেতনা ধারণ করা।
4. কোন তালেবে ইলমের সাথে আর্থিক লেনদেন করা।
5. কারো গায়ে হাত তোলা।
(আমাদের সন্তানদের আবাদি ও বরবাদি এ সবের উপর নির্ভর করে। আল্লাহ তায়ালা এসব থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন)
সর্বাবস্থায় তালেবে ইলমের কল্যাণ চিন্তা করে মাদরাসা যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইখতিয়ার রাখে।